Mahmud

Written by Mahmud Hasan, Writer & Poet (Western University) 

Full Story here: https://www.facebook.com/groups/BSAAC/permalink/1436436769728222


©PBSCU This document is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-ShareAlike 4.0 Unported License. This license allows you to use, share and modify the document for noncommercial purposes only as long as it is redistributed under the same license and attribution to this work is made according to the license rules. We request that you cite the original writer’s name and the group’s name in all cases.


Mahmud took help from the group and currently he is giving back to the group as an active moderator. He is an ideal example of overcoming hardships. His contributions to the group can not be expressed in words. 


আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করি ২০১১ এর আগস্টে। আমি ছিলাম আমার ব্যাচের ফার্স্ট বয়। আমার ইউনিভার্সিটিতে আমার চাকরি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমার ইউনিভার্সিটির ভিসি তাঁর আত্নীয়াকে নিয়োগ দিতে চান শূণ্য পদটিতে। কাজেই চাকরিটা আমার আর হয়নি। আমি পরে আরও দুইবার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমার ডিপার্টমেন্টের তৎকালীন চেয়ারম্যান সহ রথী-মহারথীদের রোষানলে থাকার কারণে আমার একবারও সেখানে চাকরি হয়নি। বিষয়টা আমার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল। আমি কখনও খুব একটা ভাল ছাত্র ছিলাম না, কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে উঠে আমি সত্যিই জীবন-মরণ চেষ্টা করেছিলাম চারটা বছর ধরে রেজাল্ট ভাল করার জন্যে, একমাত্র স্বপ্ন ছিল ইউনিভার্সিটিতে মাস্টারি করা। স্বপ্ন ভেঙে যাওয়র বেদনা অতি নিকটজনের মৃত্যুর চেয়ে কোন অংশেই কম বেদনাদায়ক না। কাজেই আমি খুব হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি তখন। কে জানে, হয়তো আমার ইউনিভার্সিটির ভিসি সহ বাকি শিক্ষকেরা খুব খুশি হয়েছিলেন আমার হতাশাগ্রস্ত হওয়া দেখে। ‘শিক্ষক’ শব্দটা কিছুটা ভুল ব্যবহার করলাম আসলে, তাঁরা ছিলেন আমার কেবলই কোর্স ইনস্ট্রাক্টর। আমার ইউনিভার্সিটি জীবনে কোর্স ইনস্ট্রাক্টর তো অনেক এসেছেন, তাঁদের ভেতরে আমার শিক্ষক হয়ে উঠতে পেরেছেন আসলে দুই একজনই। যাইহোক, আমার যখন সেখানে চাকরি হল না, আমার একটা তখন স্যামসাং বাংলাদেশ আর এন্ড ডি সেন্টার থেকে আরেকটা চাকরির অফার ছিল, আমি সেটা ফিরিয়ে দিয়ে জয়েন করে ফেললাম স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। যদিও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি আমাকে স্যামসাং এর চেয়ে কম টাকা অফার করেছিল, কিন্তু তখন আমার কাছে শিক্ষকতাটা কোন পেশা ছিল না, নেশাও ছিল না, ছিল একটা আরাধনার মতো, আমি সেই আরাধনাটাই করতে চেয়েছিলাম আমার সবটুকু দিয়ে। স্ট্যামফোর্ড থেকে সাত মাস পর আমি চলে গেলাম একটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি করতে - বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। দেশ থেকে আসার আগ পর্যন্ত আমি সেখানেই ছিলাম।


বাংলাদেশের অধিকাংশ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী যেটা করে যে, আন্ডারগ্র্যাড পাশ করার পর পর কোথাও একটা জায়গায় মাস্টারি করে কিছুদিন, অথবা অন্য কোন চাকরি করে, সেই সময়টাতে বাইরের ইউনিভার্সিটি গুলোতে খোঁজ-খবর করে, জিআরই-আইইএলটিএস এইসব দেয়, তারপর কোথাও সুবিধামতো একটা কিছু হলে সেখানে চলে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম পছন্দটা থাকে আমেরিকাতে, দ্বিতীয় পছন্দ হয়তো কানাডা, অথবা ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া কোথাও। আমার প্রথম পছন্দটা ছিল কানাডায়। প্রথম কারণ, আমার রেজাল্ট ভাল ছিল, কানাডায় ভাল এডমিশন পেতে আমেরিকার মতো জিআরইটা মূখ্য নয়, বরং ফলাফলটা মূখ্য। আমি সেই সুযোগটা নিতে চাইলাম। দ্বিতীয়ত, আমি আসলে খুব হতাশ ছিলাম, যে কোন মূল্যে হোক আমি চিরতরে দেশ ছাড়তে চাইছিলাম। মূল কারণটা ছিল এই যে, আমার ইউনিভার্সিটিতে আমার চাকরি না হওয়াটা আমাকে ভয়াবহ হতাশাগ্রস্ত করে ফেলেছিল। দীর্ঘদিন আমি আমার ইউনিভার্সিটির কোন বড় ভাই, ছোট ভাই, বন্ধু বা কোন কোর্স ইনস্ট্রাক্টরের সাথে কথা বলতাম না। আমার মনে হতো, এই বুঝি কেউ জিজ্ঞেস করে বসল - তোমার চাকরি টা হয়নি শুনলাম, খুব খারাপ লাগল শুনে। মূল ঘটনা টা কী বলতো শুনি? বলাই বাহুল্য, এই গল্প আমি পুরোপরি আজ পর্যন্ত কেউকে বলিনি, আমার এই প্রসঙ্গে কথা বলতে খুব একটা ভাল লাগে না। কাজেই আমি সবাইকে এড়িয়ে চলতাম। আমার নানাবিধ মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল তখন। আমার প্রথম প্রকাশিত বই নিঃশব্দ নিনাদে আমি সেই সময়টা নিয়ে একটা গল্প লিখেছিলাম, আগ্রহী পাঠকেরা পড়ে দেখতে পারেন। আর চিরতরে দেশ ছাড়া ভিন্ন আমার অন্য কোন রাস্তা আসলে ছিল না। আমেরিকা যেতে পারতাম, কিন্তু তখন জেনেছিলাম যে আমেরিকায় পাকাপাকি ভাবে থাকার ব্যবস্থা করাটা আসলে খুব একটা সহজ না, সেই তুলনায় বরং অস্ট্রেলিয়া বা কানাডা অনেক সহজ। অস্ট্রেলিয়াতে কিছু ওয়ার্ল্ড ক্লাস ইউনিভার্সিটি আছে সেটাও সত্যি, কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে আমার আপন বোন থাকেন, আমি চাইছিলাম এমন কোথাও যেতে যেখানে আমার কারও সঙ্গে নিজেকে নিয়ে কথা বলতে হবে না। কাজেই সব মিলিয়ে কানাডা আমার জন্য একটা মোটামুটিভাবে ভাল পছন্দ ছিল। আমি নিজে নিজে কানাডায় বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ও প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দিলাম। এইসব সময়ে সবাই বড় ভাইদের কাছে যায় নানাবিধ বুদ্ধি-পরামর্শ নিতে, আমি কারও কাছে গেলাম না। আমার একটা ক্ষোভ ছিল (এখনও আছে) যে, যেই সব বড় ভাইরা আমার দুঃসময়ে আমার ইউনিভার্সিটির অন্যায়ের বিরূদ্ধে একটা কথা বলে নাই, তারা আবার কীসের বড় ভাই? রাতের পর রাত জেগে মশার কামড় খেতে খেতে ইমেইল করি, প্রফেসরদের প্রোফাইল ঘাঁটি, রিজিউমে আপডেট করি। তখন নতুন বিয়ে করেছি। নতুন বউকে মশারির ভেতর রেখে আমি সারারাত বাইরে বসে এইসব করি। সুদীর্ঘ একটা সময় পর নিজে নিজে একটা ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন সহ ফান্ডিং যোগাড় করে ফেললাম একদিন।

সেটা ফেব্রুয়ারি ২০১৩ এর শেষের দিকের কথা। ভিসার জন্য যখন এপ্লাই করব, তখন একদিন আমাকে আমার এক কলিগ Prospective Bangladeshi Students in Canadian Universities গ্রুপটার খোঁজ দিল। বলল, যে এইখানে গিয়ে ভিসা সংক্রান্ত সাহায্য চেয়ে পোস্ট দিলে সবাই খুব সাহায্য করে। আমি গ্রুপটাতে জয়েন করলাম, তবে কোন সাহায্য চেয়ে পোস্ট দিলাম না। কারও কাছ থেকে সাহায্য চাইতেও তখন ইচ্ছে করছিল না আমার। তবে মেঘ না চাইতেই জল বলে যেই কথাটা আছে, আমার ক্ষেত্রে সেটা শতভাগ সত্য প্রমাণিত হল। আমি এই গ্রুপটার ফাইল সেকশনটা ঘেঁটে দেখলাম কীভাবে ভিসার এপ্লাই করতে হবে সেটার একদম এ-টু-জেড লেখা আছে। অফিসের প্রিন্টার দিয়ে ফাইলগুলো প্রিন্ট করে একটা চোথা (পরীক্ষার জন্য তৈরী করা নোট-বিশেষ, বাংলাদেশের পাবলিক ইউনিভার্সিটির হলগুলোতে এই টার্মটা বেশ জনপ্রিয়) বানিয়ে ফেললাম। যখনই যেখানে যেতাম, সেটা একদম পয়েন্ট বাই পয়েন্ট ফলো করতাম। সেটা পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য এপ্লাই করা থেকে শুরু করে নিয়ে একদম কানাডায় এসে প্রাথমিকভাবে কী কী লাগবে তার শপিং লিস্ট পর্যন্ত! আমি এই গ্রুপটাতে কখনও পোস্ট করিনি, তবে অন্যদের পোস্ট এবং সেইসব পোস্টে প্রাপ্ত কমেন্ট পড়েই আমার আইডিয়া অনেকটা পরিষ্কার হয়েছিল কানাডার ব্যাপারে।


আগস্টের শেষে একদিন টরন্টোর উদ্দেশে জীবনে প্রথমবারের মতো বিমানে চড়ে বসলাম। পকেটে সম্বল আড়াই হাজার ডলার আর কিছু বিদ্যা-বুদ্ধি আর মনের ভেতর দুর্বার সাহস। সদ্য বিয়ে করা বউ রেখে এসেছি দেশে, সেটা তো খারাপ লাগছিলই, তবে ভালও লাগছিল এই ভেবে যে অবশেষে দেশ ছাড়তে পারলাম। কথা প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, দেশ ছেড়েছি আজকে চার বছর হতে চলল প্রায়, আমি একবারও দেশে যাইনি এর মাঝে, যেতে ইচ্ছেও করে না আর। দেশের জন্য যে আমার ভালবাসা নেই বা খারাপ লাগে না তা নয়, তবে যখনই দেশের কথা ভাবি, আমার মনে হতে থাকে আমি আমার হলের একটা স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে বসে দিন-রাত পড়াশোনা করছি আর আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আমার ইউনিভার্সিটির ভিসি, ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান সহ অন্য কোর্স ইনস্ট্রাক্টররা অট্টহাসি দিচ্ছে। সেই বীভৎস অট্টহাসির দৃশ্যটা দেখতে পাই, কাজেই দেশে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও আমি যেহেতু সেই মানসিক অবস্থাটা আবার ফিরিয়ে আনতে চাই না, আমি জোর করে হলেও অন্য একটা কিছু ভেবে দেশে যাওয়ার চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে দেই।


যাইহোক, টরন্টো এসে নামলাম। চলে গেলাম আমার ইউনিভার্সটিতে, যেখানে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছি আমি। শুরু করলাম নতুন এক দেশে নতুন এক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার এক অদ্ভূত যাত্রা। PBSCU গ্রুপটাকে একটাবার ধন্যবাদও জানাইনি, তবে প্রতিটা নোটিফিকেশন চেক করতাম গ্রুপটা থেকে পাওয়া। কার কী সমস্যা, কে সেটার কেমন সমাধান দিচ্ছে সব দেখতে থাকলাম। এদিকে কানাডাতে নিজের অভিজ্ঞতা হতে থাকল। একটা সময় মনে হলো, কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর আমি অন্যদের অনেক ভাল দিতে পারব। তখন প্রথম আমি বিভিন্ন পোস্টে কমেন্ট করা শুরু করলাম। এই কমেন্ট করতে গিয়েই আমার পরিচয় আব্দুল্লাহ আল মারুফ ভাইয়ের সাথে, যিনি এই গ্রুপটার প্রতিষ্ঠাতা। মারুফ ভাইকে আমি আগে থেকেই চিনতাম, তবে জানতাম না। তাঁকে জানলাম, এবং খুবই অবাক হলাম যে মারুফ ভাইয়ের জীবনটাও অনেকটা আমার মতোই দেখে। মারুফ ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে পারেননি অনেকটা একই রকম কারণে, তুখোড় ফলাফল করার পরও। আমি জানি না মারুফ ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারলে কয়জন ছাত্রের জীবন বদলে দিতে পারতেন, তবে এই গ্রুপটা খোলার মাধ্যমে ফ্রি-অফ-কস্ট তথ্য দিয়ে সাহায্য করে তিনি যে হাজার হাজার ছাত্রের জীবনের মোড় বদলে দিয়েছেন সেটা আমি খুব ভাল জানি। কেউ হয়তো সেটা স্বীকার করবে না আজ, এই গ্রুপ থেকে সাহায্য নিয়ে কানাডায় আসার পর সবাই বিরাট তালেবর হয়, এই গ্রুপের নাম শুনলে অবাক হওয়ার ভান করে বলে - PBSCU আবার কী? সেটা বলতেই পারে, অকৃতজ্ঞতা আার ভন্ডামো আমাদের জাতিগত সমস্যা। তবে আমার স্বীকার করতে কোন বাধা নেই যে, অন্তত আমার জীবন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই গ্রুপ ও মারুফ ভাইয়ের ভূমিকা পরোক্ষভাবে হলেও কত ব্যাপক। আপনারা হয়তো ভাবছেন, তথ্য দিয়ে সাহায্য করলে আবার সেটা বড় করে বলার কী আছে? আছে রে ভাই। আজকের পৃথিবীতে তথ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর নিজস্ব কোন পণ্য নেই, কোন পণ্য এরা উৎপাদনও করে না। তারপরও এরা এত এত টাকা কামাচ্ছে কেবলমাত্র আপনার-আমার তথ্য বিক্রি করে। ঢাকার কিছু বিশেষ এলাকায় গিয়ে দেখুন, কীভাবে কানাডায় ইমিগ্রেশন নিবেন সেই তথ্য আপনাকে বলা বাবদ পাঁচ হাজার টাকা ফিস দাবি করে বসবেন এমন অনেক কনসাল্টেন্সি ব্যবসা সেখানে খোলা আছে। কাজেই ফ্রি-অফ-কস্ট তথ্য দেয়াটা তাঁর উদারতা এবং বদান্যতা।


একটা সময় মারুফ ভাই আমাকে বললেন PBSCU গ্রুপের একজন এডমিন হতে। আমি এই সুযোগ লুফে নিলাম। মারুফ ভাইযের মতো এত না হলেও অন্তত কিছু মানুষকে সাহায্য করতে পারব এই সুযোগ আমার জন্য অনেক বড় ছিল। PBSCUকে কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ হয়নি কখনও, এই ফাঁকে সেই কৃতজ্ঞতাও জানানো হবে। এডমিন হওয়ার পর আমি প্রথমবারের মতো এই গ্রুপে পোস্ট দেয়া শুরু করলাম। কীভাবে আমি আমার ওয়াইফের স্পাউস ভিসা নিয়েছি, কীভাবে প্রফেসর খুঁজে বের করতে হবে, কীভাবে রিজিউমে লিখতে হবে, কীভাবে এসওপি লিখতে হবে এইসব নানাবিধ লেখা আমি এই গ্রুপে লিখেছি। প্রচুর মানুষ সেখান থেকে উপকৃতও হয়েছেন, ঠিক যেভাবে আমি একদিন হয়েছিলাম। সবচেয়ে বড় সাহায্যটা হয়তো করেছি প্রচুর গ্র্যাজুয়েট ছাত্রকে, তাঁদের স্পাউস ভিসা পেতে সাহায্য করে। সব কথা বলার সুযোগ নেই, তাই এক কথায় বলতে গেলে এই বলা যায় যে, ২০১৫ এর জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরে এই গ্রুপে যতটা সম্ভব, যেভাবে সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। আমার স্বপ্ন পূরণে আমি কারও কাছে সাহায্যের জন্য যেতে পারিনি, তখন আমার পাশে এই গ্রুপটা ছায়ার মতো দাঁড়িয়েছিল, কাজেই আমিও এই গ্রুপের পাশে ছায়া হয়ে দাঁড়িয়েছি। এই দীর্ঘ সময়ে এই গ্রুপ থেকে অনেক পুরনো এবং একদম প্রথম দিককার অনেক সদস্য নিজেদের ব্যস্ততার কারণে এখন আর সক্রিয় থাকতে পারেন না, ইয়াফি মুনতাসির ভাইয়ের নামটা না বললে এখানে আর চলছে না, তবে তাঁর মতো অনেকেই আছেন। আমি সকল কন্ট্রিবিউটরগণকে স্মরণ করছি শ্রদ্ধার সাথে।


আমি যখন এই গ্রুপে ২০১৩ তে জয়েন করি, তখন বোধহয় হাজার পাঁচেক সদস্য ছিল গ্রুপটাতে, চার বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে এখানে আজ পঞ্চাশ হাজার সদস্য। মানে প্রায় দশ গুণ! নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই গ্রুপের অব্যবসায়িক মনোবৃত্তি আর সাহায্য করার উদার মানসিকতা আকৃষ্ট করেছে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীকে। কানাডাতে গত চার বছরে গ্রাজুয়েট-আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে এসেছে এমন ছা্ত্রদের ভেতরে অন্তত ৯০ শতাংশ ছাত্রই এখান থেকে তথ্য-পরামর্শ নিয়েছেন। হয়তো তাঁদের ভেতর আরও ৯০ শতাংশই সেটা স্বীকার করবেন না, তবে তাতে সত্যটা বদলে যাবে না। এই গ্রুপের মূলনীতি হচ্ছে বিনামূল্যে ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য ও পরামর্শ বিতরণ, বলা যেতে পারে ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানো, তবে তৃপ্তিটা তখন লাগে যখন দেখা যায় বনের মহিষেরা মাস্টার্স-পিএইচডি শেষ করে চমৎকার কিছু ক্যারিয়ার করে নিজেদের জীবনকে উন্নত করে ফেলেছেন। বনের মহিষেরা কৃতজ্ঞ থাকলে ভাল হতো, তবে অকৃতজ্ঞ হলেও সমস্যা নেই। বনের মহিষদের শূণ্য থেকে নিয়ে একদম একশ পর্যন্ত যেতে দেখাটার যে তৃপ্তি সেটার সমান আর কিছু নেই।

ব্যক্তিগত গল্প বলে লেখাটা শুরু করার মূল কারণ হচ্ছে তিনটা। প্রথম কারণ হচ্ছে মারুফ ভাইয়ের সঙ্গে আমার মিলটা কোথায় সেটা বলা, আর দ্বিতীয় কারণটা হচ্ছে একদম এনোনিমাস থেকেও যে এই গ্রুপ থেকে সাহায্য পাওয়া সম্ভব সেটা বুঝানো। তৃতীয় কারণটা হচ্ছে আমার জীবনটা এই গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে কীভাবে বদলে গেছে সেটা বলা। এখন আর মানসিক সেই সমস্যাগুলো অনুভব করি না। আমার ইউনিভার্সিটির চার দেয়ালের ভেতর আটকে থাকা সেইসব কোর্স ইনস্ট্রাক্টরদের কথা ভাবলে আমার এখন হাসিই পায়। তাঁরা আজও নিশ্চয়ই ইউনিভার্সিটিতে কোন প্রোগ্রাম হলে কে কোন পদ নিবেন সেটা নিয়ে কামড়া-কামড়ি করেন। পরে পদ অনুযায়ী যতটা সম্ভব ভাতা দাবী করে বসেন। পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে চাকরি করার স্বপ্ন আমার পূরণ হয়েছিল শেষ পর্যন্ত, তবে আমার কোর্স ইনস্ট্রাক্টররা আমাকে সেটা নিয়ে কোন সাহায্য করেননি। আমার দেশের বাইরে পড়তে আসার ব্যাপারে হয়তো তাঁদেরই উচিৎ ছিল সবচেয়ে বেশি আমার পাশে দাঁড়ানোর, কিন্তু তাঁরা দাঁড়াননি। PBSCU দাঁড়িয়েছিল। একজন ভেঙেচুড়ে যাওয়া মানুষ থেকে PBSCU আমাকে একটা ভাল ডিগ্রি পাওয়া থেকে শুরু করে কানাডায় ভাল একটা জীবন যাপন করতে সাহায্য করেছে - আমার সেই জন্যে PBSCU এর কাছে কৃতজ্ঞতার কোন শেষ নেই।